আমার ফাঁসি চাই ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মতিয়ুর রহমান রেন্টু রচিত বই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত বইটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ানোর অভিযোগে শেখ হাসিনা কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
পাশাপাশি মতিয়ুর রহমান রেন্টু এবং তাঁর স্ত্রিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। মতিয়ুর রহমান রেন্টু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বিতর্কিত লেখক। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয়ে লড়াই করেছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছেন। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবদান স্বীকৃত, যা প্রমাণিত হয় সরকারি নথিপত্রে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ভারত সরকারের দেওয়া বিরল সনদের মাধ্যমে। রেন্টু গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের আব্দুল বারীর পুত্র ছিলেন।
আমার ফাঁসি চাই | Motiur Rahman Rentu
তিনি আনুমানিক ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠ কর্মসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিতর্কিত রচনা “আমার ফাঁসি চাই”, যা প্রথম ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করেন, বিশেষ করে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে।
বইটি প্রকাশের পর পরই, ২৯ জুন, ২০০০ সালে সরকার এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যেহেতু এর বিষয়বস্তু উত্তেজনাপূর্ণ ও সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। রেন্টুর জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল তাঁর উপর সংঘটিত হত্যাচেষ্টা। ২০০০ সালের ২০ জুন, তাঁর বাড়ির সামনে, বিকেল সাড়ে ৩ টায় ৯ নম্বর বি কে দাস রোডে, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
এই হামলায় তাঁর শরীরে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়, কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনা তাঁর জীবনে এক মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে তিনি “অন্তরালের হত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী” নামে আরেকটি বই লেখেন, যেখানে তিনি এই হত্যাচেষ্টার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তার জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন এই বইটিতে।
তিনি ২০০৩ সালে তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এক বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকার পর তিনি প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মতিয়ুর রহমান রেন্টু ৫৩ বছর বয়সে, ১০ নভেম্বর, ২০০৭ সালে প্যারিসে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে প্যারিসেই দাফন করা হয়।
তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তার লেখা বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তিনি একজন জটিল ও বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিতর্কিত লেখক পর্যন্ত নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।