এইচএসসি

দুশ্চিন্তায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

দুশ্চিন্তায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে বারবার এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোয় দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থীরা। তিন দফায় আট দিনের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা জানান, যে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে সেগুলোর জন্য আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে।

এতে পড়াশোনার গতি কমে যাবে। এ ছাড়া গত এক মাসে মাত্র তিনটি পরীক্ষা দিয়েছেন তারা। ফলে পরবর্তীতে সেশনজটে পড়ার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা পেছানোয় এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সময় কম পাওয়া যাবে।

 

বারবার পরীক্ষাসূচি পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। তারা বলছেন, পরীক্ষা পেছানোয় আমরা তাদের পড়ার টেবিলে আর নিয়মিত হতে দেখছি না। আমরা বলার পরও তারা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না।

শিক্ষকরা বলছেন, বারবার পরীক্ষা পেছানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ফলাফলে। যে কোনো পরীক্ষার যখন শিডিউল ঘোষণা করা হয়, তখন এটা পরীক্ষার্থীদের ওপর একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করে। যা পরীক্ষার্থীরা সহনশীলভাবে নিয়ে পড়াশোনায় নিয়মিত হন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।

স্থগিত হওয়া পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। গত ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। আর বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু হয়।

পূর্বঘোষিত পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী, ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ১১ আগস্টের পর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। প্রথমে বন্যা ও পরে আন্দোলন এবং কারফিউর কারণে পরীক্ষা পেছানোয় বেশি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সিলেট বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) এইচএসসি পরীক্ষার্থী আল ইমরান বলেন, সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শেষ করেছেন।

 

বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৯ জুলাই থেকে। এ কারণে অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা তাদের চেয়ে ১০ দিন এগিয়ে। এখন যদিও সারা দেশে পরীক্ষা হচ্ছে না; কিন্তু অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলা-ইংরেজিসহ প্রধান প্রধান পরীক্ষা শেষ করায় তাদের চাপ কমে গেছে। তাদের দুশ্চিন্তাও কম। রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হবে।

এখনও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো না। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর। অনির্ধারিত বন্ধের প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরে। এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা পুনরায় শুরু করার চেষ্টার বিষয়ে তিনি জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস বন্ধের মধ্য দিয়েই যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না তারা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাদের ভাবনার বিষয়। এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে শিক্ষাসূচি এখনও ঠিক হয়নি।

প্রতি বছরের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের টার্গেট ছিল আগামী বছর এপ্রিলে পরীক্ষা নেওয়ার। রাজধানীর মনিজা রহমান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাধবীলতা বলেন,

পরীক্ষার রুটিন বারবার পরিবর্তন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হয়। বারবার পরীক্ষা পেছালে বিভ্রান্তি বাড়ে। কোনো একটি বিষয় প্রস্তুতি শুরু করেছে, দেখা গেল ওই পরীক্ষাটি হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *